অ্যাজমা বা হাঁপানি (শ্বাসকষ্ট) থেকে সুস্থ থাকতে চাইলে ইনহেলার ব্যাবহার সম্পর্কে জানুন
অ্যাজমা বা হাঁপানি হলো শ্বাসনালির প্রদাহজনিত দীর্ঘমেয়াদি একটি রোগ। এই রোগ প্রবাহের ফলে শ্বাসনালি অনেকটা ফুলে যায় এবং অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে উঠে। এতে হাঁপানির বিভিন্ন লক্ষণ, যেমন—কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ বাধা এবং শোঁ শোঁ আওয়াজ হয় । সঠিক ও নিয়মিত ভাবে চিকিৎসা নিলে এ উপসর্গ গুলো সবই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসে। হাঁপানির চিকিৎসার বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ব্যবহূত করা হয়, যেমন—রোগ নিরাময় ওষুধ, রোগ প্রতিরোধ বা বাধা দানকারী ওষুধ,ইনহেলার ইত্যাদি। এ ওষুধগুলো সম্পর্কে সকলের ধারণা থাকতে হয়।
এই পর্বে আপনাদেরকে ইনহেলার ব্যাবহারের সম্পর্কে কিছু বলবো। ইনহেলার আসলে কি? ইনহেলার কীভাবে কাজ করে, এর সঠিক মাত্রা কী, ইনহেলার এর সাধারণত কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে এ সকল সম্পর্কে তুলে ধরা হবে।
ইনহেলার হলো অ্যাজমা রোগের উপশমকারী।ইনহেলার গ্রহণে কি কোন বাধা আছে? অবশ্যই বাধা আছে ৷ তবে সুখের বিষয়টা হল আমরা সেই বাধাকে অতিক্রম করতে পেরেছি। প্রথমে বাস্তব বাধাটির কথা বলবো,তারপর কাল্পনিক যে বাধা আছে, সেই সম্পর্কে তুলে ধরবো। বাস্তব বাধাটিকে চিকিৎসকরা METERED DOSE INHALER (MDI) বলে থাকে। ইনহেলার যেহেতু স্প্রে ফর্মে থাকে– সে কারণে হাতে টেপা ও প্রশ্বাস টানা একদম সময় মতো হওয়া খুবই জরুরি৷ চিকিৎসকরা একে বলেন HAND-MOUTH-CO-ORDINATION৷ এই দুইটা একসাথে করার জন্য অবশ্যই প্রশিক্ষণ লাগে৷ আমাদের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ : কম করে ১৫ মিনিট ধরে তিন বার একজন মানুষকে বোঝালে তা ভালোভাবে বুঝতে পারবে৷ তবে এই মুশকিলকে সহজ করার জন্য চলে এসেছে DRY POWDER INHALER (DPI))। ইনহেলার নেওয়ার সময় হাওয়ার সাথে যাতে ছড়িয়ে না যায় , সেই সহযোগিতা করবে এই DRY POWDER INHALER (DPI)) তবে সব ক্ষেত্রেই সঠিকভাবে নেওয়ার পদ্ধতিটা জানতে হবে।
ইনহেলার ব্যাবহার বিষয়ে একটা মজার ব্যাপার আছে, তা হল রোগী যত নিশ্চিতভাবে চিকিৎসককে বলবে, তিনি ইনহেলার ভালো ভাবে নিচ্ছেন এবং তার আর কোনও পরীক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। সেই ক্ষেত্রে কিন্তু প্রায় ততটাই নিশ্চিত হতে হয়, যে তিনি ঠিক ভাবে ইনহেলার নিচ্ছেন না৷ এই শেষ কথাটির মধ্যে লুকিয়ে আছে আসল কথা।
এবার বলবো, ইনহেলার নেওয়ার কাল্পনিক বাধা এর সম্পর্কে৷ লোকে কেন ইনহেলার নিতে চান না? তার জন্য রয়েছে অনেক কারণ৷ সকল কারণ এর মধ্যে এটাই হল প্রধান কারণ, সাধারণভাবে ইনহেলার নেওয়ার মত করে বিভিন্ন মানুষ নেশা করে। ধূমপান, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের ড্রাগস ব্যাবহার করে ইনহেলার মত করে৷ তাছাড়া হাঁপানি রোগের জন্য দায়ি করা হয় এই নেশাকে। তার জন্যই বিভিন্নও লোকে চায় না যে রোগটা অন্যরাও জেনে যাক৷
কিন্তু প্রশ্ন হল, চশমা পরতে যদি বাধা না থাকে, তাহলে অসুখ সারানোর জন্য ইনহেলার ব্যাবহার লজ্জা কেন? বিভিন্নও ক্ষেত্রে দেখা যায়, রোগীকে বোঝালে তাঁরা গুরুত্বটা বুঝতে পারেন ৷ তাই অযথা লজ্জা বা কোনও দ্বিধা রাখবেন না ৷ কিংবা নেওয়ার পদ্ধতি জটিল মনে করে কখনো এড়িয়ে যাবেন না৷ আপনি কি বলতে পারবেন, ইনহেলার নেওয়ার পদ্ধতি কি খুব জটিল? একটু জটিল নয়, তবে শিখতে হয় ৷
আবার বলি, ইনহেলার মূলত দু’ ভাবে নেওয়া যায়৷
একটা স্প্রে– একে বলে METRE DOSE INHALER (MDI),
অন্যটি গুঁড়ো অর্থাৎ, DRY POWDER INHALER (DPI)৷
তবে MDI নিতে ভালো প্রশিক্ষণের দরকার হয়৷ সময় মতো হাতে টেপা ও মুখ দিয়ে বুক ভরে শ্বাস টেনে নেওয়া৷ চিকিৎসকরা যাকে বলেন HAND MOUTH CO-ORDINATION ৷ মনে রাখবেন, এইটা ভুল হলে সব প্রচেষ্টাই মাটি ৷ তবে তুলনার দিকদিয়ে DPI নেওয়া অনেকটা সহজ, কারণ স্প্রে-এর মতো মুহূর্তে হাওয়ায় ছড়িয়ে যায় না৷
হাপানি রোগটা এখন শুধু যে বয়স্ক মানুষের হয়ে থাকে তা কিন্তু না,, খুব ছোট বাচ্চারাও এই রোগ থেকে রেহাই পায় না, তাই তারা ঠিক মতো ইনহেলার নিতে পারে না৷ এমনকী অনেক বড়রাও ঠিকঠাক ভাবে ইনহেলার করতে পারেন না৷ তাই ছোট ও বড় যাঁরা MDI ঠিক নিতে পারেন না, তাঁদের জন্য আছে MDI-। এই MDI- সঙ্গে একটি চোঙার মতো SPACER৷ SPACER আছে যার মাধ্যমে স্প্রেটিকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ধরে রাখে এবং রোগী ধীরে ধীরে তা নিতে পারে ৷ খুব ছোট বাচ্চাদের জন্য আছে MDI ও SPACER-এর সঙ্গে আছে BABY MASK । ইনহেলার নেওয়ার আর এক পদ্ধতি নেবুলাইজার ৷ কিন্তু সেটা মূলত যাঁরা খুব বেশি শ্বাসকষ্টে ভুগছেন এছাড়া কিছুতেই তারা ইনহেলার নিতে পারেন না শুধু তাঁদের জন্য৷
ইনহেলার ব্যাবহারের ধারাবাহিক নিয়মগুলো তুলে ধরলাম।
১ম ধাপঃ ঢাকনাটি খুলে, ইনহেলারটি ডান হাতের তর্জনী এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ধরুন।
২য় ধাপঃ ইনহেলারটি ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিন।
৩য় ধাপঃ মুখ হাঁ করে ধীরে ধীরে শ্বাস ছেড়ে দিন।
৪র্থ ধাপঃ মাউথ পিসটি শক্ত করে ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরুন।তারপর ক্যানিস্টারটি জোরে চাপ দিন এবং বের হওয়া গ্যাসটা ধীরে ধীরে লম্বা শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে মুখ দিয়ে শ্বাসনালিতে নিয়ে নিন।
৫ম ধাপঃ যতক্ষণ পর্যন্ত পারবেন, ততোক্ষণ মুখ বন্ধ করে শ্বাস বন্ধ রাখুন কমকরে হলেও ১০ সেকেন্ড। তারপর ধীরে ধীরে শ্বাস ত্যাগ করুন।
৬ষ্ঠ ধাপঃ কমপক্ষে ১ মিনিট স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস নিন।
৭ম ধাপঃ আবার ১ম থেকে ৫ম ধাপের পুনরাবৃত্তি করতে থাকুন।
৮ম ধাপঃ ক্যানিস্টারের ঢাকনাটি আবার ভাল ভাবে লাগিয়ে দিন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ইনহেলার ব্যবহারের নিয়ম বার বার পরীক্ষা করুন।
১ম ধাপঃ ঢাকনাটি খুলে, ইনহেলারটি ডান হাতের তর্জনী এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ধরুন।
২য় ধাপঃ ইনহেলারটি ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিন।
৩য় ধাপঃ মুখ হাঁ করে ধীরে ধীরে শ্বাস ছেড়ে দিন।
৪র্থ ধাপঃ মাউথ পিসটি শক্ত করে ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরুন।তারপর ক্যানিস্টারটি জোরে চাপ দিন এবং বের হওয়া গ্যাসটা ধীরে ধীরে লম্বা শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে মুখ দিয়ে শ্বাসনালিতে নিয়ে নিন।
৫ম ধাপঃ যতক্ষণ পর্যন্ত পারবেন, ততোক্ষণ মুখ বন্ধ করে শ্বাস বন্ধ রাখুন কমকরে হলেও ১০ সেকেন্ড। তারপর ধীরে ধীরে শ্বাস ত্যাগ করুন।
৬ষ্ঠ ধাপঃ কমপক্ষে ১ মিনিট স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস নিন।
৭ম ধাপঃ আবার ১ম থেকে ৫ম ধাপের পুনরাবৃত্তি করতে থাকুন।
৮ম ধাপঃ ক্যানিস্টারের ঢাকনাটি আবার ভাল ভাবে লাগিয়ে দিন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ইনহেলার ব্যবহারের নিয়ম বার বার পরীক্ষা করুন।
ইনহেলার যন্ত্রের মাধ্যমে শ্বাসের ওষুধ গ্রহন করা সহজ হয়। এভাবে ওষুধ শ্বাসনালীতে অনেক তারাতারি কাজ করতে পারে এবং এতে করে ওষুধের পরিমান খুব কম লাগে। কিন্তু একটা সমস্যা হল, সঠিক ভাবে ওষুধ শ্বাসের সঙ্গে নিতে না পারলে, কোন ধরণের উপকার তো হবেই না বরং ধীরে ধীরে আরও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাবে। এই ইনহেলার ব্যবহার সত্ত্বেও যদি শ্বাস কষ্ট বেশি বেড়ে যায় তখন ট্যাবলেট খেতে হবে অথবা প্রয়োজনে ক্ষেত্রে ইনজেকশন ব্যবহার করতে হবে । তাই ইনহেলার ব্যাবহারে সঠিক পদ্ধতিতে জানা জরুরি।
No comments:
Post a Comment